করোনা মহামারি প্রতিরোধী ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। সোমবার (১০ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই বিধিনিষেধ জারি করে। বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনসাধারণকে অবশ্যই বাড়ি বাইরে গেলে মাস্ক পরিধান করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ ও আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই টিকা সনদ দেখাতে হবে।

আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ ১১ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

এদিকেগত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে আরও ২ হাজার ২৩১ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এতে করে দেশে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯০ জনে।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয় ২৬ হাজার ১৪৩ জনের। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২০৮ জন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫১ হাজার ১১৩ জন।

করোনা প্রতিরোধে ১৩ জানুয়ারি থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ

কোভিড-১৯-এর টিকার বুস্টার ডোজের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ আজ রোববার শুরু হচ্ছে। মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) প্রতিষ্ঠানে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি ও সম্মুখসারির কর্মীদের মধ্যে এ টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

মানিকগঞ্জের গড়পাড়ায় শুভ্র সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গতকাল শনিবার দুপুরে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথমে ফাইজারের টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এটির অনুমোদন দিয়েছে। যাঁরা প্রথম দিকে টিকা পেয়েছেন, তাঁরাই বুস্টার ডোজের আওতায় আসবেন। পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই এই কর্মসূচি চালু হবে। ‘সরকারের হাতে বর্তমানে ফাইজারের ৬০ লাখ টিকা রয়েছে। আগামী মাসে আরও দুই কোটি টিকা আসবে। মোট চার কোটির অর্ডার ডব্লিউএইচও থেকে আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে কিছু পেয়েছি। আরও তিন কোটি আসবে। তাই টিকার কোনো সংকট হবে না।’

কোভিড টিকার বুস্টার ডোজের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু আজ

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের দিনে সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এ শপথ পাঠ করান। দেশের প্রতিটি বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভার্চুয়ালি এ শপথ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে দুই দিনব্যাপী ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শপথ পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর শপথে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের বিজয় দিবসে দৃপ্ত কণ্ঠে শপথ করছি যে শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।’

বিকেল ৪টা ৩৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শপথ মঞ্চে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। দুই বোন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে শপথ পাঠ করেন। এ সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা, সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা, দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। শপথের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ দেশে গণতন্ত্র, ভোটের ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যাঁরা শহীদ হয়েছেন, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করেন।

শপথ শুরুর আগে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, আমরা বাংলাদেশের বিজয়ের এই সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে শপথ গ্রহণ করি যে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, বিশ্বসভায় উন্নত সমৃদ্ধ বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলব।’

শপথের আগে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ১৯৭১ সালে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দীর্ঘ ২৪ বছরের স্বাধীনতাসংগ্রামের ফসল। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বাঙালি জাতি পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করবে—এটা পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান মেনে নিতে পারেনি। তাই বাঙালিদের ওপর শুরু করে নিপীড়ন-নির্যাতন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের মানুষকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহবান জানান। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকতে বলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতি জেলা, মহকুমা, থানা, গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর ভাষণে তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহবান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও। সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ শত্রুটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’

শেখ হাসিনা বলেন, ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) এই স্বাধীনতার ঘোষণা ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার্স থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সমগ্র দেশে পাঠানো হয়। আগে থেকেই ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী তাঁর তিনজন সহকর্মীসহ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন। এই বার্তা বাংলাদেশের সব পুলিশ স্টেশন অর্থাৎ থানায় প্রেরণ করা হয়। থানায় কর্মরত অফিসাররা এই বার্তা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের হাতে ভোররাতে পৌঁছে দেন। একই সঙ্গে টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারেও এ বার্তা সমগ্র দেশে পৌঁছে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে, মুখে চোঙ্গা ফুঁকিয়ে বা রিকশায় করে মাইক দিয়ে জেলা থেকে থানা পর্যন্ত এই বার্তা প্রচার করেন। প্রচারপত্র তৈরি করে বিলি করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৬শে মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন। এরপর একে একে অন্য নেতারা এই ঘোষণা পাঠ করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রিকায়ও প্রচারিত হয়। বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশ মোতাবেক যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী ভারত, রাশিয়াসহ অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং সেসব দেশের জনগণ। মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে আমরা পরাজিত করি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয়।’

শপথ অনুষ্ঠানের আগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের, সুরের ধারার ও দেশের বরেণ্য শিল্পীরা ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নাম মুজিবর’ শীর্ষক গান পরিবেশন করেন।

বিজয় দিবসে শপথ গ্রহণ করতে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা শহরের স্টেডিয়াম এবং শপথের জন্য নির্ধারিত স্থানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত হয়। বড় আকারের স্ক্রিনে শপথ অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হয়। জাতীয় পতাকা হাতে সবাই শপথ পাঠ করে।

সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিল বাংলাদেশ

আমাদের পেজ লাইক করুন

error: Content is protected !!