ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী ধামের গান। আর এ গান দেখতে ইউনিয়নের হাজারো মানুষের ভিড়ে উৎসবে রুপ নিয়েছে।
কার্তিক মাসে লক্ষ্মীপূজায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ঠাকুরগাঁও জেলার সর্বত্র লক্ষ্মীধামের গানের আসরের আয়োজন করে। প্রতিবছরের মতো এবারও গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) শুরু হয়েছে ধামের গানের আসর। হিন্দু-মুসলমানসহ সব ধর্মের নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধরা একই কাতারে বসে রাতভর উপভোগ করে থাকে এ গান। জেলায় এবার প্রায় ২০০ ধামের গানের মঞ্চ হয়েছে।
ধামের গানের মজার ব্যাপার হলো নারীবেশে পুরুষরাই কাপড় পরে লম্বা চুলের ঝুঁটি, মাথায় খোঁপা, নাকে নাকফুল, কানে দুল পরে অভিনয় করেন। তারা নানা রঙ্গ-রসিকতার মাধ্যমে তুলে ধরেন ঘটমান জীবনের নানা ঘটনা। এ সময় তাদের চেনা দায় হয়ে পড়ে। তখন মনে হয় পুরুষের নারীবেশে চরিত্রটি যেন এক অপূর্ব সৃষ্টি।
মূলত দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য ছেলেরা মেয়েদের পোশাক পরে অভিনয় করেন। এমনই একজন সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের নদীয়া পাল। তিনি বলেন, ‘আগের মতো আর এই ধামের গানের জনপ্রিয়তা নাই। আগে দিন-রাত ৩ দিন আসরগুলোতে গান চলত। এখন চলে দুয়েক দিন। টাকা কম দেয় বলে অনেকে আর এই গানে অভিনয় করতে চায় না।’
মোহাম্মদপুর ইউনিয়ানের ভাউলারহাট মোড় লক্ষ্মীরধামে গান করতে আসছে নেকমরদ হাট থেকে ‘১৬ দলের সরদারনি’ নামে একটি দল। দলের মাস্টার জিতেন পাল বলেন, ‘হামার গ্রামত যে ঘটনালা ঘটে, সে ঘটনালা দিয়া হামরা গান তৈরি করি। অনেক সময় বই থেকেও হামরা গান তৈরি করি। ছেলেরা মেয়ে সাজে অভিনয় করে। আর মানুষজন এইসব দেখে মজা করে, আনন্দ করে।’
আকচা ইউনিয়নের দেবীগঞ্জ বাজারের ধাম গানের কমিটির সভাপতি মানিক হাড়ি বলেন, ‘আগে আমাদের এই আসরে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ধামের গান হতো। এখন আর হয় না, শুধু রাতে হয়। দল তেমন আসে না। তবে আমরা প্রতিবছর গানের দলগুলো নিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে থাকি। এবার যে দল প্রথম হবে তার জন্য পুরস্কার টেলিভিশন, দ্বিতীয় বাইসাইকেল আর তৃতীয় হারমোনিয়াম।’
একসময় পাড়ায় পাড়ায় বসত এ গানের আসর। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ধামের গানের ব্যাপকতা দিন দিন কমছে। সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াই স্থানীয় যুবকরা গ্রামে গ্রামে চাঁদা তুলে এ গানের আয়োজন করে থাকে। আদায়কৃত অর্থ পালাকারদের সম্মানী হিসেবে ব্যয় করা হয়। পালার মান যাচাই করে প্রতিটি পালাকে দেড় থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী দেওয়া হয়।