আনিছুর রহমান(রলিন) ,মুন্সীগঞ্জ
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে যেন দুর্ঘটনার হটস্পট। প্রায় পাঁচ বছরে এখানে ১৬৬ মৃত্যু ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে মাওয়া পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটারে দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এবার ঈদ ঘিরে বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। পুলিশ বলছে, চেকপোস্ট না থাকলেই আইন অমান্য করার প্রতিযোগিতায় নামেন চালকেরা।
গত ৮ মে, মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সিরাজদিখানে, দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে বাসের ধাক্কায় মারা যান একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচ জন। এর আগে, ২৭ ডিসেম্বর টোলপ্লাজায় দাঁড়ানো প্রাইভেটকারে বাসের চাপায় নারীসহ ছয়জন নিহত হন।২০২০ সালে চালু হয় এই মহাসড়ক। সেই থেকে চলতি মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি দুর্ঘটনা হয়েছে। প্রাণ গেছে ১৬৬ জনের। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগ ঘটেছে সিরাজদিখান থেকে মাওয়া পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটারে। এ জন্য দ্রুতগতি, ওভার টেকিং, যত্রতত্র পার্কিংকে দায় দিচ্ছেন মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা।
চালকেরা জানান, হাইওয়েতে যেখানে গাড়ি ব্রেক করার নিয়ম নেই। সেখানে গাড়ি ব্রেক দিয়ে রাখেন অনেকে। পেছনের গাড়ি দ্রুত এলে, নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না, দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, এক্সপ্রেসওয়েতে যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা হয় গাড়ি। রাস্তার মাঝখানে অনেক সময় অনেকেই গাড়ি রেখে দেয়। পেছনের গাড়ি দেখে না, ঘটে দুর্ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে ইয়ং জেনারেশনের হাই স্পিড গাড়ির ক্ষেত্রে। মোটরসাইকেল, বাস চালকদের গাড়ি অনেক দ্রুত চলে, এদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই চালকদের লাইসেন্সগুলো ঠিকভাবে চেক করা দরকার। গতি নিয়ন্ত্রণও জরুরি।
এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চালানোর দক্ষতা নেই বেশিরভাগ চালকের। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ বলেন, মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার মূল কারণ হলো দ্রুত গতি, ট্রাফিক আইন মেনে না চলা। রাস্তার পাশে নষ্ট গাড়ি রেখে সেখানে ঠিক করা। পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সরাসরি রাস্তা পার হয়। ট্রাফিক যে ব্যবস্থা আছে সেটা ঠিকভাবে মেনে চলে না। পরিবহনের যে একটি নীতি আছে সেটাও তারা পুরোপুরি মেনে চলে না।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, চেকপোস্টের কাছে স্বাভাবিক গতিতে থাকে যানবাহন। তবে পুলিশের উপস্থিতি না থাকলেই আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখান চালকেরা। শ্রীনগরের হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদির জিলানী বলেন, ‘আমরা কিন্তু বেপরোয়া গতির কারণে চালকদের মামলা দিচ্ছি। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য মামলা দিচ্ছি। আবার ওভার স্পিডের জন্য মামলা দিচ্ছি। আমরা আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু যখন বেপরোয়া চালকেরা পুলিশের গাড়ি দেখে তখন গাড়িগুলোর গতি কমিয়ে দেয়। যখনই পুলিশের এলাকা পার হয়ে যায় তখনই আবার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়। আমরা হয়তো ৩০ কিলোমিটারের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় গাড়ি চেক করি। কিন্তু বাদ বাকি জায়গা তো আমরা চেক করতে পারি না।’