প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত গাছে হাড়ি টানান গাছিরা। গাছের ফোটাফোটা রসে পূর্ণ হয় হাড়ি। সেই রস ভর্তি হাড়ি ভোর রাত থেকে শুরু হয় নামানোর কাজ, হাড়ি নামিয়ে চুলোর উপরে বিশেষ বড় টিনের কড়াইয়ে ঢেলে সেই রসকে আগুনে জ্বালিয়ে ঘন করার পর কড়াই চুলো থেকে নামিয়ে সেটি ঘুটনির সাহায্যে কিছুক্ষণ ঘুটা হয়। ঘুটার পরে সেই ঘন তরল গুড় ছোট ছোট মাটির সাচে ঢালা হয়। কিছুক্ষণ পর সেগুলো জমাট বেঁধে ঢিকা গুড়ে পরিণত হয়। এভাবেই দিনভর চলতে থাকে গাছিদের কর্মযজ্ঞ। আর প্রাকৃতিক পরিবেশে এমন কর্মযজ্ঞ দেখতে, খেজুরের রস ও গুড় খেতে এবং কিনতে স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রতিদিন দূরদূরান্তের দিনাজপুর, পঞ্চগড় সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন শতশত দর্শনার্থী ও ক্রেতা।
ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে আসা কিছু স্টুডেন্টদের সাথে কথা হলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরির দৃশ্য দেখতে ভোর পাঁচটায় আমরা এখানে এসেছি। সরাসরি গাছ থেকে রস পেয়ে গুড় তৈরির প্রক্রিয়াটি দেখলাম। এবং টাটকা রস খেলাম মন জুড়িয়ে গেলো।
স্থানীয় একজন মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, এখানকার গুড় ও রস খুবই সুস্বাদু। তাই দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে আসেন রস ও গুড় কিনতে। দিনাজপুর থেকে লিটন আহম্মেদ এসেছেন গুড় কিনতে। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সেখানকার বস আমাকে খেঁজুরের গুড় নিয়ে যেতে বলেছেন। তাই আমি এখানে গুড় কিনতে এসেছি। এখানকার গুড়ে কোনো ভেজাল মিশ্রণ নেই, আমাদের সকলের সামনেই তৈরি গুড় কিনে আমরা আনন্দিত।
নাটোর জেলার লালপুর থেকে খেঁজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির করার জন্য এসেছেন আব্দুল মালেক, তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে গাছের ছাল কেঁটে হাড়ি টানানোর কাজ দুপুর পর্যন্ত চলে। আর এই হাড়িতে ফোটায় ফোটায় রস জমতে থাকে। পরে সেই হাড়ি গুলো রাত ৩টা থেকে গাছ থেকে নামানো হয়। হাড়ি ভর্তি সেই রস দিয়ে গুড় তৈরি করা হচ্ছে। এখানে দুই প্রকার গুড় তৈরি করা হয়। একটি স্থনীয় ভাষায় ঢিকা গুড় ও লালি গুড় যেটিকে ঝোলা গুড় বলা হয়। এসব প্রতি কেজি ৩০০ দরে এবং খেঁজুরের রস প্রতি লিটার 100 টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে। আর গতবছর এই বাগান রাজশাহী জেলার গাছিরা লিজ নিয়েছিলেন মাত্র ৪০ হাজার টাকায়। কিন্তু এবার বাগানটি সুগার মিল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এক বছরের জন্য ১ লাখ ৭২ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন স্থানীয় দুই যুবক।
বতর্মানে শীত কম হওয়ায় গাছ থেকে রস কম বের হচ্ছে। বর্তমানে সাতশ গাছ থেকে দিনে ১ হাজার লিটার রস বের হচ্ছে। শীত বাড়লে এই বাগান থেকে দিনে ৩ হাজার লিটার রস সংগ্রহের আশা করছেন বলে জানান বাগান লিজ গ্রহিতা আল আমীন।
তিনি বলেন, এখানে নির্ভেজাল গুড় তৈরি করা হচ্ছে। তাই এখান থেকে প্রচুর মানুষ রস ও গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানে ভোর রাত থেকে সারা দিনে অনেক মানুষের ভিড় হয়। মানুষের এমন ভিড় দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগে। আমরা আনন্দিত।
বর্তমানে এই খেঁজুর বাগানটি দর্শনীয় জায়গায় পরিণত হচ্ছে। এটিকে বিকশিত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলায়েত হোসেন।