রৌমারীতে শ্রেণি কক্ষের জানালা বন্ধ করে মাটি ভরাট, হুমকির মুখে চারতলা ভবন

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা দ্বি-মুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষের জানালা বন্ধ করে মাটি ভরাট এবং পান সিগারেটসহ নানান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ার পায়তারা’র অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দোকান ঘর বরাদ্দের নামে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের ছক তৈরি করার পরিকল্পনা করেছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
গতকাল রবিবার সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, চারতলা বিশিষ্ট ভবন ও শ্রেণীর কক্ষের জানালা বন্ধ করে গাইডওয়াল নির্মাণ করছেন এবং মাটিও ভরাট করা হচ্ছে। ওই গাইডওয়াল ভেঙে গেলে অথবা ধসে গেলে চারতলা বিশিষ্ট ভবনটি ভেঙে যাওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসি।

জানা গেছে, ২০২১ সালে ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৮তম বৈঠকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বা গেইটে পান-সিগারেটের দোকানসহ অন্য কোনো দোকান স্থাপন না করতে পারে সে বিষয়ে একই বছরের ২৪ নভেম্বর চিঠি পাঠিয়ে সিদ্ধান্তের কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে ২৫ নভেম্বর অধিদপ্তর ও বোর্ডগুলোকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ওই বছরের ২৯ নভেম্বর তারিখে জারি করা আদেশটি ১ ডিসেম্বর প্রকাশ করে আদেশটি সব সরকারি বেসরকারি স্কুল কলেজের প্রধান এবং মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, স্কুল ও কলেজের গেইটের সামনে কোন স্থায়ী বা অস্থায়ী দোকান না রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পুলিশ বাহিনীর সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।

স্থানীয় আমির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ভবনটির শ্রেণী কক্ষের জানালা বন্ধ করে নদী থেকে মাটি কেটে এনে অবৈধভাবে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি ভরাট করছেন। মাটি ভরাটের পর পান-সিগারেটসহ নানান ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করবে। এতে চারতলা ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট হবে এবং দোকান-পাঠ হলে বখাটেদের উৎপাত বেড়ে যাবে। ফলে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে বলেও অনেকই অভিযোগ করে বলেন এবং মাটি ভরাটের ফলে হুমকিতেও রয়েছে ভবনটি। এখনই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এলাকাবাসি আলমগীর হোসেন জানান ওই স্থানে মাটি ভরাট করে যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করলে বিদ্যালয়ের ভবনটি ঝুকিতে পড়বে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয় একাধিক শিক্ষক বলেন, এখনই মাটি ভরাট বন্ধ না করলে বড় ঝুঁকিতে পড়বে চারতলা বিশিষ্ট ভবনটিসহ শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দাঁতভাঙ্গা দ্বি-মুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানের গেটে দোকান করব না ভেঙে ফেলব সেটা আমার বিষয়। টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করনে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম রেজাউল করিম বলেন, ‘গাইডওয়াল দিচ্ছে সঠিক। তবে নিতিমালার বহির্ভূত কিছু করা যাবে না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আইবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দোকান করানো যাবে না এবং কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান সরকারি আদেশ কিংবা বিধিরবর্হিভুত কাজ করলে তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) শামছুল আলম বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গেটে সামনে কোনক্রমেই দোকান ঘর করা যাবে না। পাশাপাশি শ্রেণী কক্ষের জানালা বন্ধ রেখে মাটি ভরাটের অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান জানান, এ বিষয়ে এখনও লিখিত অভিযোগ পায়নি। তবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:

     এই বিভাগের আরো খবর

আমাদের পেজ লাইক করুন

error: Content is protected !!