নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে সহিংসতায় ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর, দোকান ও মন্দির পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক।
আজ (২০ জুলাই) বুধবার দুপুরে তারা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন-আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি ও মাশরাফি বিন মর্তুজা, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু,সাধারন সম্পাদক মোঃ আফজালুর রহমান বাবু ,জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান, জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে দিঘলিয়া মন্দির চত্বরে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্থ দিঘলিয়া মন্দিরে ৫০ হাজার টাকা, অন্য ৩টি মন্দির ২৫ হাজার টাকা করে ও ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এ অঞ্চল সাম্প্রদায়িক-সম্প্রতির উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। যারা এ ধরণের ভাংচুর ও জ্বালা-পোড়াও করেছে, তারা পরিকল্পিত ভাবে করেছে। এটার পেছনে রাজনৈতিক অপশক্তি জড়িত। সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে বাংলাদেশের সম্প্রীতি, উন্নতি ও অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্থ করতে, তারা এসব অপকর্ম করেছে। একটি তুচ্ছ ঘটনা সামনে নিয়ে এসে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী এসব অপকর্ম প্রতিহত করেছে। এসব মোকাবেলা করে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখতে চাই। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সহযেঙাগিতায় এসব অপকর্ম আমরা মোকাবেলা করতে সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘‘ যারা ধর্মের কথা বলে মানুষকে হত্যা করে, মানুষের ঘরবাড়ি লুন্ঠন করে, অগ্নিসংযোগ করে, ওরা মানুষ না। মানুষ নামের পশু ওরা। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।
মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপি বলেন, বারবারই বলে আসছি; নড়াইলে আগে কখনো এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি রেখেছি, সঠিক তদন্ত করে বিচার করতে হবে। যাতে অপরাধীরা আর কখনো এ ধরণের ঘটনা না ঘটায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জুলাই লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে কটূক্তির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি ওইদিন জুম্মার নামাজের পর বিভিন্ন পেশার মানুষের নজরে আসে। এরপর বিক্ষুদ্ধ লোকজন আকাশ সাহার গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন। ওইদিন বিকেল থেকে উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে।
বিক্ষুদ্ধ লোকজন একপর্যায়ে সাহাপাড়ার পাঁচটি বাড়ি ও দিঘলিয়া বাজারের ছয়টি দোকান ভাংচুর করেন। এর মধ্যে গোবিন্দা সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে দুই রুম বিশিষ্ট টিনের ঘরটি পুড়ে গেছে। এছাড়া সাহাপাড়ার মন্দিরের চেয়ার ও সাউন্ডবক্স এবং আখড়াবাড়ি মন্দিরের টিনের চালা ভাংচুর ও মহাশ্মশান কালিবাড়ি মন্দির সামান্য ক্ষতি করে বিক্ষুদ্ধরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে।
প্রসঙ্গত যে, গত ১৫ জুলাই লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় সাহাপাড়ার গোবিন্দ সাহা, তরুণ সাহা, দিলীপ সাহা, পলাশ সাহার বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর এর ঘটনা ঘটে । এর মধ্যে গোবিন্দা সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।ভাংচুর আগুনের ঘটনায় লোহাগড়া থানার এসআই মাকফুর রহমান বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় ১৭ জুলাই ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা করে মামলা দায়ের করে (মামলা নং-৯)। পুলিশ এ ঘটনায় এপর্যন্ত ব্যবসায়ী রাসেল মৃধা (৩৮) , মোঃ সাইদ শেখ (২৫০), রেজাউল শেখ( ৪০),মাসুম বিল্লাহ ( ৩২) ও কবির গাজী (৩২)সহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের প্রত্যেকে ৩দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত ।
অপরদিকে সাহা পাড়ার অশোক সাহার ছেলে কলেজ ছাত্র আকাশ সাহা ফেসবুকে মহানবী (সা:)-কে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দাঙ্গা সৃষ্টির অপরাধ’ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে । ১৬ জুলাই লোহাগড়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন দিঘলিয়া গ্রামের সালাহ উদ্দিন কচি সরদার। ১৬ জুলাই রাতে খুলনা থেকে আকাশ সাহাকে গ্রেফতার করে। ১৭ জুলাই বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুুল আলমের আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মাকফুর রহমান সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক শুনানি শেষে তিনদিনের মঞ্জুর করেন।