আব্দুল মুবিন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের ভুজপুরে নাবালিকা শ্যালিকাকে নির্মমভাবে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মো: শাহ পরান(৩২)’কে দীর্ঘ ১৩ বছর পর রাউজান হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
আসামী মোঃ শাহ পরান এবং নিহত ভিকটিমের বড় বোন দেলোয়ারা বেগম ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর হতে শাহ পরান তাদের সংসারের অভাব অনটন এবং পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করত। দেলোয়ারা বেগম স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামী শাহ পরান দেলোয়ারা বেগমকে বিভিন্ন সময় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিত।
গত ০১ এপ্রিল ২০১০ ইং তারিখে দেলোয়ারা বেগম ও তার ১০ বছর বয়সী ছোট বোন ফারহানা ইয়াছমিন @রিকা মনি খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লে রাত আনুমানিক ০৪০০ ঘটিকায় আসামী শাহপরান তার ভগ্নিপতি নাসির @নাসিমকে সহ দেলোয়ারা বেগমকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে শাহপরান ঘুমন্ত দেলোয়ারা বেগমের বুকের ডান পাশে চুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। এসময় দেলোয়ারা বেগমের চিৎকারে তার মা এবং ছোট বোন ফারহানা ইয়াছমিন ঘুম থেকে জেগে আসামীদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে আসামী শাহপরান তার হাতে থাকা ছোরা দ্বারা ফারহানার পেটে নির্মমভাবে উপর্যপরি ছুরিকাঘাত করে। এতে ভিকটিম ফারহানার নাড়ীভ’ড়ি বের হয়ে আসে এবং ঘটনাস্থলেই সে মৃত্যু বরণ করে। এ সময় ভিকটিমের মায়ের চিৎকারে তার ভাই এবং প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে আসামীরা তাদের হাতে থাকা ছোরা ও একটি ব্লেড ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত দেলোয়ারা বেগমকে প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হতে চট্টগ্রাম জেলার ভুজপুর থানায় ০২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ০১(০৪)২০১০ তারিখ ০২ এপ্রিল ২০১০, ধারা ৩০২/৩৪। মামলা চলাকালী সময়ে আসামী শাহ পরান বিজ্ঞ আদালতের নিকট হতে জামিন নিয়ে পলাতক হয়। দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় ও কোর্টে হাজিরা না দেওয়ার আসামীর অনুপস্থিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল গত ০৯ এপ্রিল ২০১৯ইং তারিখে আসামী শাহপরানকে মৃত্যুদন্ড সাজা প্রদান করে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত মামলার মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত আসামী আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ২৬ মে ২০২৩ ইং তারিখ ১১০০ ঘটিকায় বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ শাহপরান (৩২), পিতা- নূর মোহাম্মদ, সাং-পূর্ব হাসনাবাদ, থানা- ভুজপুর, জেলা- চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত মামলার মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘ ১৩ বছর যাবৎ চট্টগ্রাম মহানগরী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।