ভারতের কর্নাটক রাজ্যে হিজাব পরে কলেজে যাওয়া নিয়ে হিন্দু উগ্রবাদীদের সাথে চলছে উত্তেজনা। চরম আকার ধারণ করেছে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্ক। পরিস্থিতি সামাল দিতে ৩ দিনের জন্য সব স্কুল-কলেজ বন্ধ করলেও গতকাল মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) উদুপি জেলার মহাত্মা গান্ধী কলেজের হিন্দু-মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ক্যামেরায় ধরা পড়া শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কর্নাটকের উদুপি জেলার মহাত্মা গান্ধী কলেজে প্রবেশের সময় গেরুয়া বাহিনীর কাছে উপহাসের শিকার হন সেই কলেজের মুসলিম ছাত্রী মুশকান খান। জয় শ্রীরামসহ উগ্র হিন্দুত্ববাদী নানা স্লোগানে তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে শত শত ছাত্র, কিন্তু শত শত ছাত্রের এমন আচরণেও ভয় পাননি মুশকান। পরক্ষনেই শত শত ছাত্রের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে একাই ‘আল্লাহু আকবার’ ‘আল্লাহু আকবার’ বলে গর্জন তোলেন। পরে একটু হেঁটে আঞ্চলিক ভাষায় কিছু একটা বলে আবারও ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে বলতে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন ওই ছাত্রী।
পরে গণমাধ্যম দেয়া সাক্ষাৎকারে মুশকান বলেন, ‘আমি কলেজে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বোরকা পরে থাকায় আমাকে কলেজে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলো না। তারা ‘জয় শ্রীরাম’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলো। আমি একটুও ভয় পাইনি। আমিও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে স্লোগান দেই। পরে শিক্ষকরা এসে আমাকে সরিয়ে দেন’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি হিজাব পরার অধিকার রক্ষার লড়াই অব্যাহত রাখবো’।
ভারতের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানায়, প্রতিবাদের পর ওই ছাত্রীকে কলেজে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় ঠিকই, কিন্তু বসতে দেয়া হয় আলাদা কক্ষে। গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ৬ জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করা হয়। সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী। পরে এই রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও হিজাব পরার বিরুদ্ধে গেরুয়া ওড়না পরে অনেক শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। তারা কলেজে হিজাব নিষিদ্ধের দাবি তোলে এবং হিজাববিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়।
এদিকে, মুশকানের এমন সাহসিকতার প্রশংসা করে তাকে পাঁচ লাখ ভারতীয় রুপি পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ। দলটির সভাপতি মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানী এ ঘোষণা দেন। একইসাথে মাওলানা মাদানী এরূপ সাহসী প্রতিবাদের জন্য ওই ছাত্রীকে মোবারকবাদ জানিয়েছেন এবং তিনি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেন বলেও ঘোষণায় জানান।