ভ্যান চালকের মেয়ে পেয়েছে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ

নিজস্ব  জমি জমা না থাকলেও একমাত্র রিক্সা ভ্যান চালিয়ে ৩  সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্নে এগিয়ে চলেছেন জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধারিয়া বেলসাড়া গ্রামের একজন ভ্যান চালক। একমাত্র ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর পাশাপাশি এবার আল্পনা আকতার নামে এক মেয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। মঙ্গলবার(৫ এপ্রিল) মেডিক্যাল কলেজের ভর্তির ফলাফল প্রকাশিত হলে তার এই সুযোগের কথা প্রকাশ পায়।

আফতাবর রহমানের বাড়ী ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ধারিয়া বেলসাড়া গ্রামে। ভিটেমাটি আর ভ্যান গাড়ী ছাড়া তার আর কোন সহায় সম্পদ নেই।

একমাত্র ছেলে মুন্না আলী বাংলা বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন কয়েক বছর যাবত। তিনি এখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র । এদিকে মঙ্গলবার মেয়ে আলপনা আক্তারের মেডিকেল কলেজ ভর্তি ফলাফল প্রকাশিত হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ হয়েছে তার। এছাড়াও বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে পাত্রস্থ করেছেন আর ছোট মেয়ে পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিকে।

একমাত্র ছেলেকে এতদিন পড়ালেখার খরচ নিয়মিত নিয়ে আসছেন রিক্সা ভ্যান চালিয়ে। এবার মেয়ে  মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের খবরে খরচের চিন্তায় পড়েছেন তিনি। তিনি সংসারের খরচ যোগাতে প্রতিদিন রিক্সা ভ্যান চালানো ছাড়া আর কোন পথ নেই।

কথার ফাকে আফতাবর রহমান জানান, ভ্যান চালিয়ে ছেলেকে ঢাবিতে, মেয়ে দুটোকে পড়াচ্ছি। ছেলে মুন্না আলীর ঢাবিতে ভর্তির সময় ২৫ শতক আবাদী জমির মধ্যে ৫ শতক জমি বিক্রি করে ভর্তির খরচ বহন করি। পরবর্তীতে তার পড়ালেখা খরচ যোগাতে গিয়ে অবশিষ্ট ২০ শতক জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়াও প্রতিমাসে পড়ালেখা ৩-৪ হাজার টাকা ঢাকায় ছেলেকে পাঠানো, অন্য দুই মেয়ের পড়ালেখা খরচ এবং সাংসারিক ব্যয় বহনের একমাত্র মাধ্যম আমার ভ্যান গাড়ীটি। একদিন ভ্যানগাড়ী নিয়ে বের না হলে সংসারে চুলায় তার হাড়ি উঠেনা।

তিনি আরও জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দুই সন্তান পড়াশোনার সময় শিক্ষাবৃত্তি পায় ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে। এ শিক্ষাবৃত্তির টাকা তার পরিবারের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করেছে। মেয়েকে ভর্তি করানোর টাকা যোগাড় করতে ইতোমধ্যে তিনি তাঁর নিকট আত্মীয়দের সাথে কথা বলছেন।

তারা ভর্তির টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় তিনি অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত। কিন্তু চিন্তা হলো পরবর্তীতে মাসে মাসে যে খরচ ব্যয় করতে হবে তা আসবে কোথা থেকে। কারণ রিক্সা ভ্যানের আজকাল দুর্দিন চলছে। আগে ভ্যান চালিয়ে আয় বেশি হলেও থ্রি-হুইলার ও অটোচার্জারের ভিড়ে ভ্যান গাড়ীতে যাত্রী পাওয়া দুস্কর হয়ে উঠেছে। এছাড়াও বাজারে নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে।

ভ্যান চালকের স্ত্রী মাজেদা খাতুন জানান, আমাদের রক্তের শেষ বিন্দু থাকা পর্যন্ত সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে যাবো। মানবিক কারণে যদি কেউ সহযোগিতার হাত বাড়াতে চান, তাহলে আমরা আপত্তি করব না।

সদ্য ময়মনসিংহ মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী আলপনা আক্তার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কুশডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে।

আলপনা আক্তার বলেন, বাবা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছেন। চিকিৎসক হয়ে বাবা, মাসহ অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। বাবার স্বপ্ন পুরণে সকলের নিকট দোয়া চান তিনি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভ্যানচালক বাবার মেয়ে আল্পনা মেডিক্যালে পড়ার সুযোগ পেয়েছে এটা অবশ্যই গর্বের। তবে মেয়েটির ভর্তির জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

Please follow and like us:

     এই বিভাগের আরো খবর

আমাদের পেজ লাইক করুন

error: Content is protected !!