লালমনিরহাটে ভুট্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেকেই সেই সাথে ভুট্টা পাতা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে কর্মহীন মানুষগণ।
ভুট্টা চাষে বদলে গেছে লালমনিরহাটে জেলার অর্থনীতি চাকা ।গত ২৫ বছর ধরে ভুট্টা চাষ করে বদলে গেছে পুরো গ্রাম তাই ভুট্টা চাষে সাফল্য পাচ্ছে হাজার মানুষ ।এই বছরে ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে লালমনিরহাট জেলা । ভুট্টা রোপণের পর কয়েকবার বৃষ্টির ফলে কৃষকদের কম খরচে বেশি ফলন সম্ভব হয়েছে ইতিমধ্যেই তিস্তা ও ধরলা নদীর চর এলাকাতে ভুট্টা তোলার ধুম পড়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ভুট্টা ঘরে উঠাতে পারবেন বলে আশাবাদী কৃষকগণ ।তাই স্বল্পআয়ের কৃষক তাদের ভুট্টা ক্ষেতের গাছের পাতা ছিঁড়ে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় উপার্জন করছে ।
হাটবাজারে ভুট্টার পাতা বিক্রি হওয়া এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে চর অঞ্চলের নিন্ম আয়ের মানুষ ভুট্টার পাতা বিক্রি করে কিছুদিন ভালোভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা চালাচ্ছে সাধারণ কর্মহীন জনগণ । বিঘা প্রতি ভুট্টা ক্ষেতের পাতা ও গাছের মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে। ভুট্টার পাতা বিক্রি হওয়া এখন আর শ্রমিক লাগে না এখন আর নিন্ম আয়ের লোকজন বিনা মূল্যে পাতা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে কোনো ভুট্টার ক্ষতি হচ্ছে না। ভুট্টা তোলার ১৫-২০ দিন আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়। এতে ভুট্টার সূর্যের আলো পড়লে ভুট্টার রং লাল ও ভালো হয়।
দিনমজুর শ্রমিক লোকজন পরিবারের সবাই মিলে ভুট্টার পাতা ছিঁড়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছে। দামে কম হওয়ায় অনেকেই গোখাদ্য হিসেবে তা কিনছেন।এতে এক দিকে নিন্ম আয়ের লোকজন যেমন আয় করছেন, অন্যদিকে কম দামে বিভিন্ন গরুর খামারিরা পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লালমনিরহাট কালীগঞ্জ উপজেলা ভুল্লার হাট, ভোটমারী, হাতীবান্ধা উপজেলা ঘুন্টি ভারী , পারুলিয়া, হাতীবান্ধা বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভুট্টা পাতা বিক্রি হাট বসে । সেখানে বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ ও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভুট্টার পাতা বিক্রি করতে দেখা যায় ।এই সকল হাটবাজারে ভুট্টার পাতার আটি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা দরে। দামে কম তাই গরুর খামারিরা প্রায় ৩০ থেকে ৫০টি আটি কিনছেন তাদের কাছ থেকে। দেখা গেছে তিস্তারচর থেকে কেউ মাথায়, কেউবা ঘাড়ে কেউ সাইকেলে অটোরিকশায় ভুট্টার পাতা নিয়ে বাজারে ঢুকছেন।কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী এলাকার ভুট্টা চাষী টুটুল মিয়া (৩৫) বলেন, বর্তমানে কোনো কাজ কাম হাতে নেই তাই তিস্তা চরে গিয়ে ভুট্টা পাতা সংগ্রহ করে ভোটমারী রেলস্টেশনে বিক্রি করতে আসছি। এতে দেড়শ টাকা থেকে দুইশত টাকা আয় হচ্ছে । বাজার খরচ করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব ডাউয়া বাড়ি আদর্শ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কলেজ ছাত্র বলেন, সকাল বেলায় কলেজে যাই বিকেল বেলায় চরে গিয়ে পাতা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি। এতে যে টাকা পাই তা দিয়ে বই খাতা কলম কিনি।হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর বিছনদই গ্রামে কৃষক আকতার মিয়া জানান, ভুট্টা চাষ করে আমরা দিনে দিনে লাভবান হচ্ছি ভুট্টা গাছের পাতা সবই মূল্যবান। ভুট্টা বিক্রির পাশাপাশি পাতা বিক্রি করেও আমাদের অতিরিক্ত আয় হচ্ছে।
ভোটমারী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র কায়ছার সাথে কথা হলে সে জানায় তার বাবা দিনমজুর ঠিকমতো বই-খাতা-কলম কিনে দিতে পারেন না। তাই চরে গিয়ে পাতা সংগ্রহ করে বন্ধুরা মিলে ভুট্টা পাতা বিক্রি করি । কিছু টাকা জমিয়ে শার্ট-প্যান্ট, কলম, খাতা কিনে নেয়।কালীগঞ্জ উপজেলা ভুল্লারহাটের সাজু মিয়া ও চেংটুমিয়া জানান, বর্তমানে জিনিসপত্রের যা দাম হামার গরিব মানুষের অবস্থা খারাপ। তাই প্রতিদিন তিস্তার চরে গিয়ে ভুট্টার পাতা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি যে টাকা হয় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনে পরিবার নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি।
লালমনিরহাট জেলার প্রাণিসম্পদ অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান পশুখাদ্য হিসেবে ভুট্টার পাতা উত্তম খাবার ভুট্টা পাতা গবাদি পশুকে খাওয়ালে কোনো ক্ষতি হয় না। খামারিরা ভুট্টার পাতা সংগ্রহ করে গরু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে বেশি লাভবান হবে তাই ভুট্টা পাতা ক্রয় করেন ।লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরে এবছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ার আশা প্রকাশ করছি। কৃষকগণ ভুট্টা চাষে লাভবান হবেন। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে কৃষকরা ভুট্টার পাতা বিক্রি করে অনেকেই জীবন নির্বাহ করেন ।