ফেনীর সোনাগাজীতে আপন চাচাতো ভাইকে কুপিয়ে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলাম’কে দীর্ঘ ১৯ বছর পর গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে।
র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
নিহত ভিকটিম মোঃ শহিদুল্লা (২৬) ফেনী জেলার সোনাগাজী থানাধীন চর সাহাভিকারী এলাকার বাসিন্দা। নিহত ভিকটিমের সাথে তার আপন চাচার সাথে পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ-বন্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। উক্ত বিরোধের জের ধরে গত ২৮ মে ২০০৪ ইং তারিখ বিকাল আনুমানিক ১৬৩০ ঘটিকায় নিহত ভিকটিম শহিদুল্লা এবং তার আপন দুই ভাই তাদের পুকুর থেকে কাটা গাছ ট্রলি গাড়ীতে উঠানোর সময় চাচা এবং চাচাতো ভাইয়েরা সঙ্গবদ্ধভাবে নিহত ভিকটিম এবং তার ভাইদের উপর অতর্কিতভাবে লাঠি, লোহার রড এবং দারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে গুরতর রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিম এবং অপর দুই ভাইকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার কওে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরর্বতীতে ভিকটিম মোঃ শহিদুল্লার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফেনী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরদিন ২৯ মে ২০০৪ ইং তারিখ ভিকটিম মোঃ শহিদুল্লা ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুবরণ করেন।
উক্ত ঘটনায় নিহত ভিকটিমের ছোট ভাই বাদী হয়ে ফেনী জেলার সোনাগাজী থানায় ০৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-০৯(০৫)২০০৪ ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড১৮৬০।
মামলা দায়ের এর পর থেকে আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলাম আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত পুলিশি তদন্ত এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আসামীদের অনুপস্থিতিতে ভিকটিম মোঃ শহিদুল্লা (২৬) কে হত্যার দায়ে গত ০৭ আগস্ট ২০১২ ইং তারিখে আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলাম’কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৫০,০০০/- জরিমানা অনাদায়ে ০১ বৎসরের কারাদন্ড প্রদান করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলাম আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় অবস্থান করছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এবং র্যাব-১১, নারায়ণগঞ্জ এর আভিযানিক দল গত ০৩ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখ বর্ণিত স্থানে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলাম (৪৪), পিতা- মৃত আহছান উল্লাহ, গ্রাম- চর সাহাভিকারী, থানা- সোনাগাজী, জেলা-ফেনী’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘ ১৯ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছদ্মনামে আত্মগোপন করে ছিল। গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।