বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, যারা বঙ্গভঙ্গ রদ করেছিল তারাই সাতচল্লিশের প্রথম স্বাধীনতার পর থেকেই নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। পঁয়ষট্টির যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর থেকেই তাদের ষড়যন্ত্র আরো জঘন্য রূপ নিয়েছিল। আগরতলা, ছয়দফা, ঊনসত্তরে শহীদ আবদুল মালেকের হত্যাকাণ্ড, সত্তরে জামায়াতের পল্টন সমাবেশে হামলাসহ সর্বত্রই তাদের ষড়যন্ত্র সক্রিয় ছিলো। সত্তরের নির্বাচনের পর ম্যান্ডেট মেনে না নেয়ায় অনিবার্য হয়ে পড়া মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর গণহত্যা, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গণবাহিনী-রক্ষীবাহিনির রক্ষক্ষয়ী ঘোলাটে পরিস্থিতি, লুটপাট ও দুর্ভিক্ষ, বাকশালের একদলীয় শাসন থেকে শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডে তাদেরই কালোহাত সক্রিয় ছিলো। শেখ মুজিবের ইন্ডিয়ান আর্মি প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ আনা এবং চুয়াত্তরে ওআইসি সম্মেলনে যোগদানসহ পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া হয়তোবা তারা মেনে নিতে পারেনি।
আজ ৭ নভেম্বর (শুক্রবার ) বিকাল ৪:১৫ টায় দেওয়ানবাজারস্থ বাংলাদেশ ইসলামী একাডেমি (বিআইএ) মিলনায়তনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, পনেরো আগষ্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর শেখ মুজিবুর রহমানের ক্যাবিনেটের একুশ জন মন্ত্রী নিয়েই গঠিত হয়েছিল খোন্দকার মুশতাকের সরকার। যে সরকারই আসুক, যত ষড়যন্ত্রই হোক বাংলাদেশের ইসলামি চেতনা বরাবরই অটুট ছিলো। সত্তরের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে যেমন ‘কুরআন- সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আইন করা হবে না’ সংযুক্ত করা হয়েছিল, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পরতে পরতে নামাজ-রোজা-মুনাজাত বহাল ছিলো। খোন্দকার মুশতাকের তিরাশি দিনের শাসনও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে। এক পর্যায়ে তো বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রই ঘোষণা করা হয়েছিল। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন এবং বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছিল চীন, সৌদি আরব, ও পাকিস্তানসহ অন্য রাষ্ট্রগুলোর। কিন্তু, ইন্ডিয়ান হেজেমনির ষড়যন্ত্র আবারো সক্রিয় হয়ে উঠে। খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ক্যু করে আবারো দখলে নিতে চায় তারা। জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে অপসারণ করে গৃহবন্দী রাখা হয়। ভুলক্রমে একটি ল্যান্ডফোন চালু থাকায় জিয়ার যোগাযোগের পথ খুলে যায়। এদিকে তিয়াত্তরের জানুয়ারি থেকে সমাজতান্ত্রিক ধারায় সংগঠিত বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার নেতা কর্নেল তাহেরের সাথে জিয়ার যোগাযোগ হয়। তাহেরের পরিকল্পনা ছিলো জিয়াকে মুক্ত করে বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ঘোষনা করে নেতৃত্ব দেয়ার। কিন্তু জিয়া জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝেই সমাজতান্ত্রিক ষড়যন্ত্রে পা দেননি।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ, নারায়ে তকবির-আল্লাহু আকবর শ্লোগান নিয়ে নেমে পড়ে একদল সেনা। বায়তুল মোকাররম থেকেও অনুরূপভাবে গগনবিদারী শ্লোগানে স্বতঃস্ফূর্ত জনতা সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে যায়। পঁচাত্তরের সাত নভেম্বরে অভূতপূর্ব এ ঘটনার স্বাক্ষী হয় বাংলাদেশ। এভাবেই ইন্ডিয়ান হেজেমনির সমাজতান্ত্রিক ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বামধারা ও ভারতীয় দোসররা পরাজিত হয় এবং বাংলাদেশের নেতৃত্ব চলে আসে জিয়াউর রহমানের হাতে বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ আর , নারায়ে তকবির-আল্লাহু আকবর শ্লোগানধারী জনতা কারা ছিলো তা বরাবরই আলোচনার বাইরে রয়ে গেছে। সেদিন তো জিয়ার কোন দল ছিলো না। বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠার আগেই যে ইসলাম পন্থাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, মূলতঃ তারাই সেদিন জনতার নেতৃত্ব দিয়েছিল। এভাবেই বাংলাদেশ পন্থা আর ইসলাম পন্থা একাকার হয়েছিল সেদিন। সিপাহী-জনতার মিছিলে উচ্চারিত শ্লোগানগুলো ছিলো, নারায়ে তাকবীর- আল্লাহু আকবর, বাংলাদেশ – জিন্দাবাদ, জিয়াউর রহমান- জিন্দাবাদ, সিপাহী-জনতা ভাই ভাই, রুশ-ভারত সাবধান-আমরা সবাই মুসলমান ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, চব্বিশের ৩৬ জুলাই বিপ্লবের পরও খুনি-লুটেরাদেরকে নামে-বেনামে সংগঠিত করে সেই ইন্ডিয়ান হেজেমনি নানামুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের শিখিয়ে দেয়া একাত্তরের ফ্যাসিবাদী বয়ান নিয়ে স্বৈরাচারের দোসরসহ দ্বান্ধিক মতবাদে বিশ্বাসী বামপন্থী সুবিধাভোগীরাই ক্রিড়নকের ভূমিকা পালন করছে নতুন বাংলাদেশের অভিযাত্রাকে থামিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে। বিপ্লব ও সংহতি দিবসে আজকে শপথ নিতে হবে ঐক্যবদ্ধতার। বাংলাদেশপন্থা ও ইসলামপন্থার সম্মিলিত প্রয়াসেই নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে হবে বিপ্লবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যুব প্রজন্মকে সাথে নিয়ে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহর সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি ও চট্টগ্রাম ২ ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম ৯ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. এ কে এম ফজলুল হক, নগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এস এম লুৎফুর রহমান প্রমুখ।
উক্ত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নগর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আমির হোছাইন, খুলশী থানা আমীর অধ্যাপক আলমগীর ভূঁইয়া, পাঁচলাইশ থানা আমীর ইন্জিনিয়ার মাহবুবুর হাসান রুমী, কোতোয়ালি থানা নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুজ্জাহের, চকবাজার থানা নায়েবে আমীর আব্দুল হান্নান।