ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কুলিক নদীর তীরে অপরূপ সৌন্দর্যের রাজা টংকনাথের বাড়িটি সংস্কারের অভাবে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
এই বাড়িটি এখন ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে রূপ নিয়েছে। জেলার ঐতিহ্য বহন করা বাড়িটি যুগের পর যুগ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় এখন মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে নির্মিত জমিদার বাড়িটি বর্তমানে অনেক অংশই নষ্ট হয়েছে দেখভাল ও সংস্কারের অভাবে।
মাঝেমধ্যেই খসে পড়ছে ইট ও পলেস্তরা। দ্বিতল ভবনের অধিকাংশ প্রান্ত থেকে আগাছা জন্মে রূপ নিয়েছে গাছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ও অবহেলিত অবস্থায় দণ্ডায়মান রাজবাড়িটি। দেখে মনে হয় বনজঙ্গল, চামচিকার অবাধ বিচরণ ও অনেক স্থান ধ্বসে পড়ার মর্মান্তিক দৃশ্য। সংস্কার ও সংরক্ষণের নেই কোনো সরকারি উদ্যোগ।জানা যায়, টংকনাথের পিতার নাম বুদ্ধিনাথ চৌধুরী। বুদ্ধিনাথ চৌধুরী ছিলেন মৈথিলি ব্রাক্ষণ এবং কাতিহারের ঘোষ বাগোয়ালা বংশীয় জমিদারের শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত। নিঃসন্তান বৃদ্ধ গোয়ালা জমিদার কাশিবাসে যাওয়ার সময় সমস্ত জমিদারি সেবায়েতের তত্ত্বাবধানে রেখে যান এবং তাম্রপাতে দলিল করে যান। তিনি কাশি থেকে ফিরে না এলে শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত এই জমিদারির মালিক হবেন। পরে বৃদ্ধ জমিদার ফিরে না আসার কারণে বুদ্ধিনাথ চৌধুরী জমিদারি পেয়ে যান। তবে অনেকে মনে করেন এই ঘটনা বুদ্ধিনাথ চৌধুরীর দু’এক পুরুষ পূর্বের।
রাজবাড়ি নির্মাণের কাজ বুদ্ধিনাথ চৌধুরী শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি। এটির কাজ সমাপ্ত করেন রাজা টংকনাথ। বৃটিশ সরকারের কাছে টংকনাথ রাজা উপাধি পান। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রাজবাড়িটি নির্মিত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় রাজবাড়িটি। যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের পাতা থেকে।চোখ জুড়ানোর জমিদার বাড়ির পশ্চিমদিকে সিংহদরজা। দরজার চূড়ায় দিক-নির্দেশক হিসেবে লৌহদণ্ডে ‘ঝ.ঘ.ঊ.ড’ চিহ্ন অঙ্কিত থাকলেও তা এখন আর চোখে পড়ে না। দিন যত যাচ্ছে- অযত্নে ও সংরক্ষণের অভাবে রাজবাড়ির ঐতিহ্য মুছে যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা উত্তরের এ জেলার রাজবাড়িটি উপভোগ করতে এসে মুগ্ধতার বদলে ফিরছেন আক্ষেপে। স্থানীয়রা মনে করেন, এখনো রাজবাড়িটি সংস্কার করা হলে বিনোদন স্পটের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে প্রসার ঘটবে।
রাজবাড়িতে ঘুরতে আসা ওমর ফারুক বলেন, এখানে ঘুরতে এসে দেখলাম এটির অবস্থা ভঙ্গুর। এটি মাদকের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। প্রাচীন এই স্থাপনাগুলো এভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু দেখার কেউ নেই। এগুলো সংস্কারের জন্য আবেদন জানাচ্ছি।রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘসময় তদারকির অভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কবলে পড়ে রাজবাড়ির মূল্যবান সম্পদ চুরি ও লুট হয়ে যায়। দখলকারীরা অনেকে বাড়ির ইটসহ নানান স্থাপনা নিয়ে চলে যায়। এই বিষয়ে অনেকবার বিভিন্ন প্রিন্ট ও মিডিয়াতে নিউজ প্রচার হওয়ার পরেও কোনো প্রকার সংরক্ষণের উদ্যেগ নেওয়া হয় নাই। প্রাচীন এই নিদর্শন আজ বিলুপ্তির পথে।’
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, ‘ইচ্ছে থাকলেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া রাজবাড়ির কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। তবে সংস্কারের জন্য চিঠি পাঠানোর পর প্রত্নতত্ত্ব কর্তৃপক্ষ দ্রুত সংস্কার করার আশ্বাস দিয়েছেন।’