অনলাইন ডেস্কঃ
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাফরাবাদ এলাকা থেকে দুর্ধর্ষ দুই গ্রিল কাটা চোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া চুরির মালামাল কেনার অভিযোগে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে চুরির সরঞ্জাম এবং একটি পিকআপ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. জাকির হোসেন ওরফে জ্যাক (৪৪) ও মো. নূর জামাল ওরফে জামাল (২৬)।তারা জ্যাক-জামাল নামেই পরিচিত। গ্রেফতার আরেকজন হলেন সোহেল (৩৫)। তিনি জ্যাক-জামালের কাছ থেকে চুরি করা মালামাল কিনতেন।শুক্রবার (৩ মার্চ) মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তালা কেটে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দোকান সাবাড় করে চলে যেতেন তারা। চুরি করা এবং চুরির মালামাল বিক্রির সুবিধার্থে পিকআপ কেনেন জ্যাক। সেই পিকআপে ঘুরে ঘুরেই তারা চুরি করতেন। সাত বছরে রাজধানীজুড়ে দেড় শতাধিক চুরি করেন জ্যাক-জামাল জুটি।
ওসি বলেন, ছয় মাস আগে জনৈক আসাদুজ্জামান নূরের নিউ মিউজিক এশিয়া নামের এক দোকানে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা তদন্তে জ্যাক-জামালের নাম উঠে আসে। ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর বড়বাগ পলিভিটা বেকারি এলাকায় সংঘটিত সেই চুরিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২৩টি মোবাইল সেট, একটি ল্যাপটপ, ২০টি মেমোরি কার্ড, ৫০০টি রিচার্জ কার্ড, নগদ অর্থসহ আনুমানিক দেড় লাখ টাকার মালামাল চুরি করেন জ্যাক-জামাল। দুর্ধর্ষ সেই চুরির দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জ্যাক-জামালকে শনাক্ত করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়
চুরির টাকায় পিকআপ কিনে সেই পিকআপে চড়েই চুরি
দুর্ধর্ষ জ্যাক-জামাল সাত বছরে দেড় শতাধিক চুরি করেন। চুরির টাকায় পিকআপ কেনেন জ্যাক। চুরির টাকায় কেনা এ পিকআপে চড়েই পরে চুরি করে বেড়ান তারা। আগে কয়েক রাতে একটি চুরি করলেও গাড়ি কেনার পর এক রাতে চারটি পর্যন্ত চুরি করেন তারা। পরে এ পিকআপে করেই চুরির মালামাল বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। চুরির টাকায় চুরির জন্য তারা শুধু গাড়িই কেনেনি, আলাদা বাসাও ভাড়া করেছেন। সব মালামাল একসঙ্গে বিক্রি করলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে ভাড়া করা বাসা গুদাম হিসেবে ব্যবহার করে সেখানেই চুরির মালামাল রাখতেন তারা।
৪ সেকেন্ডে তালা কেটে ৪ মিনিটে চুরি
জ্যাক-জামাল চুরি করতে বের হন রাত ২টায়। চুরি করে বাসায় ফেরেন ভোর ৬টায়। চার ঘণ্টার মধ্যেই তারা সব চুরি করেন। দুজনের মধ্যে জ্যাক গ্রিল ও তালা কাটেন। গ্রিল কিংবা তালা কাটতে তার সময় লাগে সর্বোচ্চ চার সেকেন্ড। কাটার পর দোকানে ঢুকে মালামাল চুরি করেন জামাল। তার চুরি শেষ করতে সময় লাগে মাত্র চার মিনিট! এক রাতেই তারা কয়েকটি দোকান চুরি করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, এক রাতে তারা সর্বোচ্চ চারটি পর্যন্ত চুরি করেছেন।
ছোট দোকানই টার্গেট জ্যাক-জামালের
পুলিশ জানায়, সাধারণত রাস্তার ওপরে থাকা ছোট ছোট পান-সিগারেট, মোবাইল রিচার্জের, মুদির দোকানই টার্গেট করেন তারা। কারণ এসব দোকানিরা সাধারণত অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের হন। তাই চুরি করলেও তারা মামলা করেন না। এ কারণেই দেড় শতাধিক চুরি করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা খুবই কম। জ্যাকের বিরুদ্ধে চারটি এবং জামালের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে।